
সেলিম তালুকদার, স্টাফ রিপোর্টারঃ আপনজন ও স্বজনদের অসুস্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন সহজ সরল মানুষের আবেগ কে জিম্মি করে জ্বীনের মাধ্যমে চিকিৎসার নামে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন হোসনে আরা নামের এক মহিলা। কথিত জ্বিন অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করতে না পারলেও হোসনে আরাকে রাতারাতি করেছেন কোটিপতি। প্রতারণার মাধ্যমে ইতোমধ্যেই তিনি কয়েক কোটি টাকার সম্পদ, কোটি টাকার বাড়ি ও কয়েক কোটি টাকা নগদসহ বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন।
উপজেলার নরিনা ইউনিয়নের চর নরিনা পূর্ব পাড়ায় প্রশাসন এবং সচেতন মহলের নাকের ডগায় ৮/১০ বছর যাবত প্রতিদিন শত শত মানুষের সাথে এভাবেই প্রতারণা করে চলেছেন বাংলা ও আরবি জ্ঞান না থাকা হোসনে আরা বেগম। আর এভাবেই শুন্য থেকে রাতারাতি প্রায় শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা দরিদ্র ফরহাদ মন্ডলের স্ত্রী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভুয়া কবিরাজ হোসনেয়ারার বাড়িতে শতাধিক মানুষ ভিড় করছে। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় উপস্থিত মানুষদের মধ্যে অনেকেই নতুন এসেছেন আবার অনেকেই দীর্ঘদিনেও সুস্থ না হয়ে এসেছেন। তারা জানায়, কবিরাজের কাছে নালিশ দিতে প্রথমে ১০ টাকার সিরিয়াল ক্রয় করতে হয়।
দুপুর দেড়টা থেকে কবিরাজ তার আসনে বসে জ্বিনের মাধ্যমে রোগীদের আচরণ বলে দেয় এবং বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই নষ্ট করা হয়েছে এবং সে বেশিদিন বাঁচবে না বলে জানায়। সহজ সরল মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে তার কাছে সমাধান চাইলে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা জেনে চলে দর কষাকষি। ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিশ হাজার টাকা দাবি করা হয়। এর মধ্যে যদি কোন ধনীর সন্তানের বিষয় হয় তখন লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি করা হয়।
পরে কথিত জ্বিনের কবিরাজ হোসনেয়ারার প্রতারণার চিত্র ধারণ করতে গেলে তিনি ও তার লোকজন সাংবাদিকদের উপরে চড়াও হয়। পরে একটি দোকানের লাইসেন্স ধরিয়ে দিয়ে বলেন এটা তাঁকে কবিরাজী করার লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। লাইসেন্সটি লক্ষ করে দেখা যায় এটা একটি দোকানের লাইসেন্স, পরে কবিরাজকে বলা হয় এই লাইসেন্স দিয়ে চিকিৎসা চালাতে পারবেন না। তখন আবারও কথিত কবিরাজ হোসনেয়ারা উত্তেজিত হয়ে বলেন আমার টাকার দরকার আমি এই কাজ করছি আপনি পারলে আমার ব্যবসা বন্ধ করেন। ইউএনও ও ওসির কাছে যান, এখানে পুলিশ নিয়মিত এসে দেখা সাক্ষাৎ করে যায়।
চিকিৎসার নামে প্রতারণার শিকার উপস্থিত কয়েকজন ভুক্তভোগী জানায়, সন্তানদের চিকিৎসার আশ্বাসে কিউ ৫ হাজার, কেউ ১০ হাজার আবার কেউ তার চেয়ে বেশি টাকা দিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও কোন কাজ না হওয়ায় তারা কথিত কবিরাজ হোসনেয়ারার কাছে তাগাদা দিতে এসেছিলেন। কিন্তু সে তাদের সাথে কথা না বলেই তারিয়ে দেন।
পরে কথিত কবিরাজ বাহিনীর এক সদস্যও বাইরে এসে তাকে ভন্ড ও কুফরী বলে সাংবাদিকদের জানায়। সাংবাদিকদের উপস্থিতির কথা ছড়িয়ে পড়লে প্রচুর মানুষ যোগাযোগ করে প্রতারিত হওয়ার তথ্য দেয়। তারা ভন্ড কবিরাজ হোসনেয়ারাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি করেন।
এই বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী জানায়, এতো বছর ধরে মানুষের সাথে প্রতারণা চালিয়ে গেলেও অদৃশ্য ক্ষমতার জোরে তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন। আগে তার স্বামী মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আর এই কাজ করে হোসনেয়ারা আলিশান বাড়ি করেছেন, গরুর খামার ও মাঠে মাঠে ৬০ থেকে ৭০ বিঘা জমির মালিক। এছাড়াও তার কাছে কয়েক কোটি টাকা নগদ রয়েছে।
এই বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শারমিন আলম বলেন, এই নারী নিয়মিত মানুষের সাথে প্রতারণা করে চলেছে। এটা ভোক্তা অধিকারে দণ্ডনীয়, তাছাড়া তার কোন রকম শিক্ষা নেই, সে অবৈধভাবে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করছে। এতে মানুষ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এবং এতে করে তাদের প্রাণহানিও ঘটতে পারে। এই বিষয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এই বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সহযোগিতায় তদন্ত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।