
মোঃ হোসেন আলী (ছোট্ট)
” আমাকে ছাড়া আমার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয়” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জে আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটির সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ১০ টায় পৌর শহরের চৌরাস্তা সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের তৃতীয়তলায় হলরুমে আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটির সিরাজগঞ্জের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ হারুন অর রশিদ খান হাসান, শুরুতে
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও অধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য ১১ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ১১ দফা দাবিনামা তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটির সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আহবায়ক পিডাব্লিউডি এর নির্বাহী পরিচালক ও আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটির সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আহবায়ক হুসনে আরা জলি, সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানের সভাপতি সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ হারুন অর রশিদ খান হাসান বলেন, ‘আমাদের আবহমানকালের চর্চায় নারীর ব্যক্তিগত জীবনের প্রায় সবকিছুর সিদ্ধান্তই নেয় তার পুরুষ অভিভাবক, পরিবার বা সমাজ। জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় জীবনের সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর নিজের কার্যকর অংশগ্রহণ, মতামত প্রদান বা ভূমিকা রাখার তেমন কোনো সুযোগই থাকে না, অর্থাৎ নারীর জীবনের প্রতিটি পর্যায়েই তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে অন্য কেউ। বলা যায়, তার ওপরে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয় এবং ছলে-বলে-কৌশলে তা তাকে মানতে বাধ্য করা হয়। ধরেই নেওয়া হয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য যথেষ্ট যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানবুদ্ধি নারীর নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারী সর্বদা, সর্বত্র পুরুষের অধস্তন, অধীনস্থ। সে নিজে বা একা কোনোভাবেই একজন পরিপূর্ণ মানুষ নয়। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি তার জীবনের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে পুরুষ। এই পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাধারা ও চর্চা প্রসূত সিদ্ধান্ত, প্রথা, নিয়ম, আইন, বিধি-বিধান নারীর অগ্রগতি, এমনকি তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকেও ব্যাহত করে। তা কেবল নারীর নয়, সমগ্র দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে।’
এসময়ে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, এসডাব্লিউসি এর নির্বাহী পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম, এসএম ইউএস এর সভানেত্রী মনিরা সুলতানা, সহ এছাড়া আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটির সিরাজগঞ্জ জেলা শাখা সকল সদস্য / সদেস্যা ও ইলেকট্রনিকস ও প্রিন্ট মিডিয়া সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য ঃ ১. নারীর উপর যেকোনো ধরনের সংঘবদ্ধ সহিংসতা বন্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
২. সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দাপ্তরিক বা অধিকারভিত্তিক কমিটি, রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নারীর সমান উপস্থিতি ও কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে৩. জুলাই অভ্যুত্থানের নারী সহযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে৪. নারী, কন্যাশিশু, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত, লিঙ্গভিত্তিক, সাম্প্রদায়িক ও গণসহিংসতা বন্ধ এবং মৌলবাদী ও উগ্রবাদী সংস্কৃতির বিস্তার রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে৫. ধর্ষণ, যৌতুক, যৌননিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণ এবং নারীর প্রতি সহিংসতাবিরোধী প্রচলিত আইনসমূহ নারীর বৈচিত্র্যময় জীবন ও বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ স্বার্থ ও সম-অধিকার বিবেচনায় সংশোধন ও পরিমার্জন করতে হবে৬. আদিবাসী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী, গৃহকর্মী, গার্মেন্টস কর্মী এবং অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারী ও প্রবাসী নারীদের সর্বোচ্চ স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে ৭. প্রতিবন্ধী নারীর জন্য গণপরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান ও বিচারব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ প্রবেশগম্য করতে হবে এবং বিশেষ সহায়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
৮. প্রতিটি জেলায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, নারীসহায়তা ও তদন্ত বিভাগ, কাউন্সেলিং, সাইবার সাপোর্ট ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা চালু করতে হবে৯. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারীবিদ্বেষী কার্যক্রম ও প্রচার নিষিদ্ধ করতে কঠোর সাইবার আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে১০. নারীর প্রতি সহিংসতা বিরোধী আইন, নারীর অধিকার ও সহায়তা সংক্রান্ত সকল ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে১১. জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে বয়সভিত্তিক জেন্ডার সংবেদনশীলতা ও ইতিবাচক যৌনশিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে।