মোঃ সোহান সেখঃ
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ্যালবাট্রস এনার্জী লিঃ (সিএনজি ফিলিং স্টেশন) নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ উক্ত প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
সিএনজি স্টেশন স্থাপনের সময়কাল ও প্রক্রিয়া:
কর্তৃপক্ষ জানান, এ্যালবাট্রস এনার্জী লিঃ ২০০৮ সালে কার্যক্রম শুরু করে, যখন বাংলাদেশে সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল। ফলে স্টেশন স্থাপনে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব বা প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসত্য।
গ্যাস সরবরাহের সীমাবদ্ধতা:
ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানান, কড্ডা থেকে সিরাজগঞ্জ শহর হয়ে বিদ্যমান গ্যাস সঞ্চালন লাইনটি মাত্র ৬ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপের মাধ্যমে স্থাপিত। সেখান থেকে এ্যালবাট্রস এনার্জী লিঃ-এ গ্যাস সরবরাহ করা হয় ৩ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ দিয়ে। অথচ বাংলাদেশে বিদ্যমান অধিকাংশ সিএনজি ফিলিং স্টেশনে মূল গ্যাস সরবরাহ লাইন ১৮ থেকে ২৮ ইঞ্চি এবং সরবরাহ লাইন কমপক্ষে ৪ ইঞ্চি ব্যাসের হয়ে থাকে। ফলে পর্যাপ্ত প্রেসারে আমরা গ্যাস সরবরাহ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
সিএনজি চালিত থ্রি-হুইলারের সংখ্যা বৃদ্ধি:
স্টেশন চালুর সময় সিরাজগঞ্জ জেলায় সিএনজি চালিত থ্রি-হুইলারের কোন অস্তিত্ব ছিল না। তখন মূলত বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের জন্য গ্যাস সরবরাহ করা হতো। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের অনুমোদনে কিছু সংখ্যক থ্রি-হুইলার চালুর সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে অনুমোদিত সংখ্যার কয়েকগুণ বেশি অবৈধ থ্রি-হুইলার চলাচল শুরু করে, যা স্টেশনের গ্যাস সরবরাহ ক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি। ফলে অনেক সময় চালকদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়, আর দ্রুত গ্যাস সরবরাহের কারণে নির্ধারিত চাপ ২০০ বার প্রেসারের পরিবর্তে তা ১০০-১২০ বারে নেমে আসে, যার ফলে যানবাহন পর্যাপ্ত গ্যাস পায় না।
অন্য ফিলিং স্টেশনের তুলনা:
বগুড়ার যেসব সিএনজি স্টেশনের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, তাদের গ্যাস সরবরাহ লাইন ও কম্প্রেসার ক্ষমতা অনেক বেশি। তাদের তুলনায় এখানে গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি হলেও, গ্যাস সরবরাহ ক্ষমতা কম। ফলে অন্যান্য স্টেশন যেখানে শোনামতে ২৫০ বার প্রেসারে গ্যাস সরবরাহ করে, সেখানে এ্যালবাট্রস এনার্জী লিঃ জননিরাপত্তার স্বার্থে সরকার নির্ধারিত ২০০ বারের বেশি চাপ প্রয়োগ করে না।
নতুন সিএনজি স্টেশন অনুমোদনের বিষয়টি:
২০০৮ সালে এ্যালবাট্রস এনার্জী লিঃ-এর সঙ্গে আরও দুটি ফিলিং স্টেশন অনুমোদন পায়, কিন্তু তারা শর্ত পূরণ করে গ্যাস স্টেশন স্থাপনে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে সরকার নতুন সিএনজি স্টেশন অনুমোদন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ২০১৮ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় আরও ৪টি স্টেশন অনুমোদন পেলেও, জটিল প্রক্রিয়া সম্পাদনে ব্যর্থ হওয়ায় এবং বিপুল বিনিয়োগ করে ভবিষ্যৎ লাভ লোকসান বিবেচনা পূর্বক নতুন গ্যাস স্টেশন স্থাপনে তারা বিরত থাকে।
সড়ক যানজট ও নিরাপত্তা বিষয়ে মন্তব্য:
শুরু থেকেই বাংলাদেশে স্থাপিত অন্যান্য সকল সিএনজি স্টেশনের মত নিয়ম অনুযায়ী রাস্তার একপাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে গ্যাস সরবরাহ করছে। বর্তমানে সড়কটি চার লেনে উন্নীত হওয়ায় যানজটের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
কর্তৃপক্ষ আরও বলেন, সিএনজি সিলিন্ডারকে "ভ্রাম্যমাণ বোমা" বলা হয়, কারণ প্রতি পাঁচ বছর পরপর সিলিন্ডার রি-টেস্ট করা বাধ্যতামূলক। তবে ২০০৮ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো তদারকি নেই। ২০০ বারের বেশি চাপ প্রয়োগ করলে বিস্ফোরণের ঝুঁকি বাড়ে, যা অতীতে বিভিন্ন দুর্ঘটনার কারণ হয়েছে।
গ্যাসে বাতাস মিশ্রণের অভিযোগ ও ভিআইপি সুবিধা:
ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ জোর দিয়ে বলেন, গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থায় বাতাস মিশ্রণের কোনো সুযোগ নেই। গ্যাসের মূল লাইন হতে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্যাস প্রবেশ করে এবং কম্প্রেসার এর মাধ্যমে তা সংকুচিত করে গাড়িতে সরবরাহ করা হয়।পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ইঞ্জিনিয়ারিং টিম নিয়মিত মেশিনের প্রেসার ও মেশিনারিজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।
এছাড়া, ১০০ টাকার বিনিময়ে ভিআইপি সুবিধা দিয়ে গ্যাস সরবরাহের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। শুধুমাত্র সরকারি যানবাহন এই সুবিধা পেয়ে থাকে।
সিএনজি ফিলিং স্টেশন তত্ত্বাবধানকারী কর্তৃপক্ষ প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যকে অসত্য ও বানোয়াট উল্লেখ করে বলেন, বিষয়গুলো যাচাই না করেই সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।