নজরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ:
ওয়েব সাইটের তথ্য গোপন ও হালনাগাদ না করে বেকার যুবকদের হয়রানি, অসাধুপায় অবলম্বনসহ নানা অনিয়ম ঢাকতে তথ্য বাতায়নে হালনাগাদের অনিহা প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক শরীফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। প্রশিক্ষন ট্রেড, যুব পুরস্কার, যুবদের অনুদানসহ নানান সুযোগ সুবিধার যাচাই-বাছাই, প্রচার-প্রচারনা ও উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ব্যর্থ শরীফুল ইসলামের শাস্তিস্বরুপ বদলী চেয়েছেন যুব সংগঠনের নেতৃত্বদানকারী প্রতিষ্ঠান ও জেলার বেকার যুবক যুবতীরা।
স্থানীয় ও অফিস ঘুরে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা শিয়ালকোল ইউনিয়নের দিয়ারবৈদ্যনাথ গ্রামে অবস্থিত যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন দপ্তরগুলোর তথ্য হাল নাগাদ থাকলেও বেকার যুবকদের উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ এ যুব উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নেই কোন তথ্য বাতায়নের ওয়েব পোর্টালে আপডেট তথ্য। যুবদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য, যুব পুরস্কার, যুব ঋণ ও অনুদানসহ নানান তথ্যাবিদ হাল নাগাদের তথ্য প্রকাশের আদেশ থাকলেও এসব যাচাই বাছাইয়ে নানা অনিয়ম করায় তথ্য যোগ করা হয়না বলে জানা গেছে। বেকার যুবকদের নিয়ে কাজ করা এই প্রতিষ্ঠান থেকে ঘরে বসেই নেট সংযোগের মাধ্যমে এক ক্লিকেই যেখানে তথ্য পেতে পারবে সেখানে অফিসে এসে যাতায়াতের সময় ব্যয় ও গাড়ী ভাড়ায় অর্থ খরচ করে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে এসে তথ্য নিতে হচ্ছে। এ নিয়ে জেলার সচেতন যুবকরা একাধিকবার উপপরিচালক শরিফুল ইসলামকে অবহিত করা হলেও তিনি নিজের খেয়াল খুশি মতো দপ্তর চালিয়ে যাচ্ছেন। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নাম না বলে শর্তে অফিসের একাধিক কর্মচারীরা জানান।
জাতীয় যুব পুরস্কার বিষয়ে নিয়ামতপুর গ্রামের খামারী আব্দুল আলিমের সাথে অফিস বারান্দায় দেখা হলে তিনি জানান, সিরাজগঞ্জ যুব উন্নয়নের তথ্য বাতায়নে হালনাগাদ না থাকায় আজ শনিবার সকালে এসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ৮দিন আগে জাতীয় যুব পুরস্কারের আবেদন প্রক্রিয়ার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অথচ ১২ মে তারিখে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে সকল জেলায় এ বিষয়ে তথ্য বাতায়নসহ ব্যাপক প্রচার প্রচারনা চালানোর কথা থাকলেও এ জেলার তথ্য বাতায়নে আপডেট দেয়নি। তথ্য হালনাগাদে অনীহা গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরে উপ পরিচালকের অনিয়ম ঢাকতেই তিনি খেয়াল খুশিমতো অফিস চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিষয়ে আরেক যুবক জুলকার নাঈম বলেন, অফিসে এসে প্রশিক্ষন গ্রহনের আবেদন ও সময়কাল বিষয়ে জেনে চলে যাচ্ছি। তথ্য বাতায়নে প্রশিক্ষন বিষয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ইনপুট করা হয়েছে। তারপর আর করা হয়নি। ধানবান্দি থেকে ৭০টাকা খরচ করে এসেছি। বেকার হওয়ার কারনে খরচ করে প্রতিদিন আসা হয় না। না আসলেও তো হয়না। ওয়েব সাইটে হালনাগাদের তথ্য থাকলে যাতায়াতের ১৪০ টাকা বেঁচে যেতো।
যুব সংগঠনের বহুতী এলাকার শাকিল আহমেদ বলেন, বেকার যুবকদের জন্য দপ্তর থেকে বিভিন্ন সময় সুযোগ সুবিধা এসে থাকে। অফিসে যোগাযোগ না করলে এগুলো পাওয়া যায় না। তথ্য বাতায়নে হালনাগাদের বিষয়ে একাধিকবার উপপরিচালক স্যারকে বলা হলেও তিনি শুনে না শোনার ভান করে থাকেন। যুবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও দূর্নীতি রোধ করতে উপ পরিচালকের দ্রুত শাস্তিস্বরুপ বদলী করতে হবে। তা না হলে এলাকার জনমত সৃষ্টি করে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
রাজশাহী বিভাগের শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা মাহফুজ উর রহমান বলেন, আগের চাইতে উদ্যোক্তা তুলনামুলক কম। বেকার সচেতনতা সৃষ্টিতে তথ্য প্রকাশ খুবই প্রয়োজন।
সিরাজগঞ্জ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা এস এম রাজিব উল ইসলাম বলেন, বাতায়নে সকল তথ্য আপডেট করা হয়। বিভিন্ন ট্রেডে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি সর্বশেষ ২০২৩ সালে আপডেট করা হয়েছে এবং জাতীয় যুব পুরস্কার আবেদনের শেষ সময় ১৫মে তারিখ ছিল এগুলোর কোন বিষয় তথ্য না থাকার বিষয় তিনি বলেন উপপরিচালক স্যার এ বিষয়ে আমাকে জানায়নি।
এবিষয়ে জেলা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের প্রোগ্রামার আব্দুল্লাহ আল রহমান বলেন, তথ্য হালনাগাদের বিষয়ে ডিসি অফিসের সমন্বয় সভায় সকলকে অবগত করা হয়। এ বিষয়ে চিঠিও প্রেরণ করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, ট্রেড, অনুদান পুরস্কারসহ নানান বিষয়াদি হালনাগাদ করা হয়। জাতীয় যুব পুরস্কারের তথ্য নোটিশ বোর্ডে হালনাগাদ না করার বিষয়ে তিনি বলেন আমাদের সাইটে এ বিষয়ে তথ্য হালনাগাদ করতে বলা হয়নি। উপজেলাগুলোতে তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে। জেলার প্রধান কার্যালয়ে তথ্য নেই এবং উপজেলার ওয়েব সাইটগুলোতেও তথ্য দেওয়া হয়নি এছাড়া গত ১২ মে জেলার উপপরিচালকগণদের নিয়ে একটি সভায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে জাতীয় যুব পুরস্কারের আবেদনের সময়সীমা ১৫ মে। এ তথ্যসহ অন্যান্য তথ্য হালনাগাদে জেলার উদ্যোক্তারা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।