
মোঃ জুবায়ের হোসাইন,বেলকুচি উপজেলা প্রতিনিধি :
যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু হওয়ায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বিঘার পর বিঘা ফসলি জমি। জিও ব্যাগ ভর্তি বালির বস্তা ফেলেও আটকানো যাচ্ছে না নদীর নদীভাঙন। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই অশান্ত হয়ে পড়েছে যমুনা নদী। গত তিন সপ্তাহ ধরে তলীয়ে যাচ্ছে বেলকুচি উপজেলার বেলকুচি, বড়দুল ইউনিয়ন সহ আশপাশের গ্রামের ফসলি জমি, রাস্তা ঘাট ও গাছপালা। নদী ভাঙনে পৌঁছে গেছে পশ্চিম পাড়ের ঘরবাড়ি পর্যন্ত। স্থানীয়রা বলছেন নদীর পূর্ব দিকে চর জেগে ওঠায় স্রোতে আঘাত হানছে পশ্চিমপারে। এপারের প্রায় তিন কিলোমিটার অংশজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন ভাঙ্গনকবলিত নদীর পশ্চিমপারের মানুষ। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে ভাঙ্গনরোধে জরুরী ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বর্ষা মৌসুমের আগেই আকস্মিকভাবে ভাঙছে যমুনা নদী। যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত ১৬ মে থেকে ২৬ মে পর্যন্ত যমুনা নদীতে ১৩৪ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। তবে পানি বাড়লে বিপদসীমার ২৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার নদী তীরবর্তী বড়ধুল ইউনিয়নের আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ছোটবেরাখারুয়া, বড় বেরাখারুয়া, দুলুকগাতি , মেহেরনগর, গাছচাপরি, বিল মহিষা সহ অনেক গ্রাম ভেঙে যাচ্ছে। যমুনা নদীর পূর্বদিকে চর জেগে উঠায় নদীর ক্যানেল সৃষ্টি হয়ে পানির স্রোতে আঘাত হানছে পশ্চিম পাড়ে। ফলে নদীর পশ্চিম পাড়ের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙ্গছে নদী তীর। গত এক সপ্তাহের
এসব এলাকার কয়েক শত বিঘা ফসলি জমি, রাস্তা ঘাট, গাছপালা।
অব্যাহত এই ভাঙনে ইতিমধ্যে নদী এখন পশ্চিম তীর রক্ষা বাঁধের কাছে এসে পড়েছে। ভাঙ্গন আতংকে নিঘুম রাত কাটছে নদী পাড়ের মানুষ।
ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে হুমকির মুখে পড়বে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কয়েকশ ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ ফসলি জমি। ফলে দুশ্চিন্তায় নদী পাড়ের মানুষ। স্থায়ী বাঁধ নির্মান করে ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনাসহ ভাঙ্গন রোধে দ্রুত কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি ভাঙ্গন কবলিতদের। ভাঙন অব্যাহত থাকলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে হুমকির মুখে পড়বে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ও বাঁধের অভ্যন্তরে থাকা এলাকার পক্ষ থেকে মোঃ মতি মোল্লা দৈনিক সিরাজগঞ্জ সংবাদ কে বলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতার কারণে বর্ষা মৌসুমের আগেই নদীভাঙন শুরু হয়েছে। বেলকুচি উপজেলার দুটি ইউনিয়ন বেলকুচি সদর ও বড়ধুল ইউনিয়নের গ্রাম নদীর ভিতরে ছিলো। কিন্তু যমুনার ভাঙনে সব শেষ। এবছরের শুরুতে ভাঙন শুরু হয়। বিষয়টি আমরা বার বার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করেছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে আমরা এলাকাবাসী মানববন্ধন করি। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফলতির কারনে ভাঙন বেড়েছে।
নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ হওয়ার পরে বাঁধ অভ্যান্তরে প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশাল চর জেগে ওঠে। এসব চরে কৃষকরা আখ, গম, কলাই, সরিষা, বাদাম, ধান সহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা হতো। এখানকার উৎপাদিত ফসল দিয়ে শত শত মানুষের জীবিকা নির্বাহ হতো। হঠাৎ করে চৈত্র বৈশাখ মাসের প্রথম দিকে ভাঙন শুরু হয়। পুরো চর ভেঙে শেষ।
নদীতে চর জেগে ওঠায় কৃষকরা বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছিলো। কিন্তু গত তিন সপ্তাহের নদীভাঙনের কারনে কৃষকের ফসল সহ জমি নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। ভাঙনের কারনে স্কুল মাদ্রসা, দোকানপাট, হাট বাজার।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নায়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জাকির হোসেন দৈনিক সিরাজগঞ্জ সংবাদকে বলেন, যমুনা নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। গত ১৬ মে ৩৩ সেন্টিমিটার, ১৭ মে ২০ সেন্টিমিটার, ১৮ মে ৪ সেন্টিমিটার, ১৯ মে ৭ সেন্টিমিটার, ২০ মে ২৫ সেন্টিমিটার, ২১ মে ৬৮ সেন্টিমিটার, ২২ মে ৩৬ সেন্টিমিটার, ২৩ মে ১৬ সেন্টিমিটার, ২৪ সে ৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। গত ১৬ মে থেকে ২৪ মে পর্যন্ত যমুনা নদীতে ১৫৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। তবে পানি বাড়লে বিপদসীমার ২৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর দৈনিক সিরাজগঞ্জ সংবাদকে বলেন, ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। এই অসমেয় নদীভাঙনের মূল কারণ হচ্ছে যমুনা নদী এলাকায় নদীর পূর্বদিকে চর জেগে উঠায় পানি পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা ভাঙন এলাকায় পর্যবেক্ষনে রেখেছি। প্রতি সপ্তাহে মনিটরিং করা
হচ্ছে। ভাঙনকবলিত এলাকায় নদীর তীর শক্তিশালী করার জন্য আমরা একটি চাহিদা প্রেরণ করেছি। অর্থ বরাদ্দ পেলেই বর্ষার আগেই ঠিক করে দিব।