শনিবার, ৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
শিয়ালকোলে পূর্ব শত্রুতার জেরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
সিরাজগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে ঈদ-উল আযহার নামাজ অনুষ্ঠিত
ইতিপূর্বে বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনগুলী কখন এবং কোন মাসে হয়েছে?
জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করলেন প্রধান উপদেষ্টা
ঈদ-উল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শিয়ালকোল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী এরশাদ রানা
সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী প্রফেসর ড. আব্দুস সামাদের ঈদ শুভেচ্ছা
ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে নাটোর-৪ আসনের সর্বসাধারণকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন মাওলানা মোঃ আব্দুল হাকিম
ঈদ-উল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইডিপি’র নির্বাহী পরিচালক আবু জাফর খান টিপু
সিরাজগঞ্জে ভোক্তার সচেতনতা বাড়াতে প্রচারে নেমেছে ক্যাব
নাটোরে সেনাবাহিনীর অভিযানে দেশীয় মদ উদ্ধারসহ গ্রেপ্তার ৫

ইতিপূর্বে বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনগুলী কখন এবং কোন মাসে হয়েছে?

ঢাকাঃ বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১২টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ‘আবহাওয়া বান্ধব’ ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ৪টি নির্বাচন হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হয়েছে ৩টি। বৈরি আবহাওয়ার সময় হয়েছে দুটি সংসদ নির্বাচন। এর একটি হয়েছে মে মাসে, অপরটি জুনে। সংসদ নির্বাচন ছাড়াও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অনেক নির্বাচন বৃষ্টি-বাদলের সময়কালে অনুষ্ঠিত হতে দেখা গেছে। দেশের একটি প্রত্যক্ষ ভোটের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও বর্ষাকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশের অতীত নির্বাচনগুলোর সময়কাল পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মূহাম্মদ ইউনূস বেশ কয়েক মাস আগে থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলে আসছিলেন। দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল-বিএনপিসহ বেশ কিছু দলের দাবি ছিল প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়ের প্রথম মাস অর্থাৎ ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশ কিছু ইসলামী দল এবং ছাত্রদের নতুন দল এনসিপি প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়ের প্রতি অটল সমর্থন দিয়ে আসছিলেন।

তবে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল মে-জুন মাস এড়িয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। গত ২ জুন প্রধান উপদেষ্টার সাথে সংলাপে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কথা বলেন। ওই সময় জামায়াতে ইসলামী নায়েমে আমীর আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, তারা প্রধান উপদেষ্টার লাইনের মাঝেই আছেন। তবে মে ও জুন পরিবেশগতভাবে সুবিধাজনক নয়। পরিবেশটা এমন থাকা উচিত যাতে ছাতা নিয়ে বেরুতে না হয়। মানুষ ঈদের মতো নতুন জামা পরে উৎসবমুখরভাবে আসবেন। আমরা সে ধরনের একটি পরিবেশ কল্পনা করি। মে-জুন সেটা একটু কঠিন হতে পারে। এই দুই মাস গেলে যে সময় থাকে… এর মধ্যে রোজা আছে। সব কিছু বিবেচনা করে তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে একটি উপযুক্ত তারিখ দেয়ার অনুরোধ করেন।

ওই সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করে বলেন, ‘নির্বাচন ডিসেম্বরের পর নির্বাচন যাওয়ার একটি কারণও নেই।’ তার দল কেন কী উদ্দেশ্যে ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন চান, তা বহুবার যৌক্তিকভাবে প্রকাশ করেছেন। ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন করতে সরকারের কোনো যুক্তি থাকলে প্রধান উপদেষ্টা তা জাতির সামনে উপস্থাপন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা গতকাল (৬ জুন) জাতির উদ্দেশ্যে এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেন। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এই তিনটি ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘আগামী রোজার ঈদের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য জায়গায় পৌঁছতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।’ বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-যা কি না জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি আমাদের সম্মিলিত দায়- সে বিষয়ে আমরা দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পারব।

এতে আমাদের ওপর আপনাদের অর্পিত ম্যান্ডেট ন্যূনতম হলেও বাস্তবায়ন করে যেতে পারব। বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে আপনাদের কাছে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে।

প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আশা ছিলো যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন। কিন্তু নিঃসন্দেহে বিএনপি শুধু নয় গোটা জাতি হতাশ হয়েছে এপ্রিলে নির্বাচনের ঘোষণায়।’ এদিকে রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকা ওই সভায় বলেন, ‘এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হলে একদিকে আবহাওয়ার সংকট এবং অন্যদিকে রমজানের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা ও কার্যক্রম এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে যা নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।’ এছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান কেন সম্ভব নয়, এর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে উল্লেখ করা হয়নি। নির্বাচন অনুষ্ঠানে অহেতুক বিলম্বে জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে বলে দাবি করা হয়।

জামায়াতে ইসলামের প্রতিক্রিয়ায় এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের সময় ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এনসিপি বলেছে, ‘জুলাই সনদ–ঘোষণাপত্র হলে ঘোষিত সময়ে নির্বাচনে তাদের আপত্তি নেই।’ এবি পার্টি বলেছে, ‘নির্বাচনে কিছু বিলম্ব হলেও সরকারের উপর তারা আস্থা রাখতে চায়।’ অন্যান্য দলগুলো মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ স্বাধীন দেশে সর্বপ্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালের ৭ মে। এভাবে চতুর্থ সংসদ নির্বাচন ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ, পঞ্চম সংসদ নির্বাচন ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। একই বছর ১২ জুন হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এটি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

২০০১ সালের ১ অক্টোবর হয় অষ্টম সংসদ ও ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত এটি সর্বশেষ ভোট। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধন করে শেখ হাসিনা তথ্য সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান চালু করে। এ দলীয় সরকারের অধীনে পরপর তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ এবং সর্বশেষ গতবছর ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে অনুষ্ঠিত ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন হয় ডিসেম্বর। ৭ ডিসেম্বর অনুষিত হয় সাধারণ পরিষদ এবং ১৭ ডিসেম্বর হয় প্রাদেশিক পরিষদের ভোট। ৭০ সালে অক্টোবর মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও বন্যার কারণে তার পিছিয়ে ডিসেম্বরে নেয়া হয়। এদিকে ৭ ডিসেম্বর ভোট হলেও সত্তরের ১২ নভেম্বর প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ভোলাসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের কয়েকটি এলাকার নির্বাচন পিছিয়ে জানুয়ারিতে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল।

এদিকে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত তিনটি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ষাকালে। ১৯৭৮ সালের ৩ জুলাই প্রথম সরাসরি বা গণ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শহীদ জিয়াউর রহমান সেই নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

দ্বিতীয়বারের মতো সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর এবং সর্বশেষ ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর তৃতীয় সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ দুটি নির্বাচনে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ নির্বাচিত হন।

বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো উপজেলা না করে দেখা গেছে, নির্বাচন কমিশন এসব নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিশেষ করে স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান- ইউনিয়ন পরিষদের শীতকালকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তবে একাধিক ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারণে কোন কোন ধাপের নির্বাচন গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকালে অনুষ্ঠিত হতে দেখা গেছে। এছাড়া স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচনও নির্বাচনী সময়োপযোগী হওয়ার প্রেক্ষাপটে কখনো কখনো গরম ও বৃষ্টির সময় অনুষ্ঠিত হতে দেখা গেছে।

এপ্রিল বাংলাদেশের উষ্ণতম মাস। এ মাসে প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি কালবৈশাখী ঝড়ও হয়ে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ বলেন, ‘এপ্রিল হচ্ছে বর্ষার পূর্ববর্তী সময়। এ সময় সাধারণত ঝড়-বৃষ্টি থাকে। বজ্রপাত-বজ্রঝড় এ সময়কালে দেয়া যায়। এগুলোর পাশাপাশি বৃষ্টিও হয়। আবার যে সময়টাই বৃষ্টি থাকে না প্রচণ্ড গরম হয়। তাপদাহ হয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে প্রতিবছরই তাপমাত্রা বেড়ে চলছে।’

সিনিয়র আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, ‘এপ্রিল বাংলাদেশের একটি উষ্ণতম মাস। স্বাভাবিকভাবে এ মাসের তাপমাত্রা একটু বেশি থাকে। তবে গেল এপ্রিল অন্যান্য বছরে তুলনায় তাপমাত্রা একটু কম ছিল। এবছর এপ্রিল মাসে কিছু বৃষ্টি হওয়ার কারণে আমরা কিছুটা সহনীয় তাপমাত্রা দেখেছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আমরা ধরে নিতে পারি আগামী বছর এপ্রিল মাসে তাপমাত্রা বেশি হবে।(সুত্র-আমার দেশ)

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০