শনিবার, ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
রায়গঞ্জে ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগিতায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী, ইঞ্জিঃ কামাল হোসেন
সিরাজগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের সংঘর্ষ, যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার ১৭
সিরাজগঞ্জে একক সংঘ ক্লাবের আয়োজনে নতুন কমিটির পরিচিতি সভা,ঈদ পুনমিলনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত 
ড. ইউনূসকে কলম ও বই উপহার দিলেন তারেক রহমান
প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে রমজান শুরুর আগের সপ্তাহে নির্বাচন হতে পারে : প্রধান উপদেষ্টা 
নিষেধাজ্ঞার ২ দিন পর দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হলো শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি 
পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জের সংসদ সদস্য থেকে তদানীন্তন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিল্প ও প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে নদীতে গোসলে নেমে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু!
চৌহালীতে মহেশপুর কল্যাণ ট্রাস্টের আয়োজনে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
চৌহালীতে বাড়তি ভাড়া নেওয়ায় ১৩ সিএনজি চালককে জরিমানা

পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জের সংসদ সদস্য থেকে তদানীন্তন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিল্প ও প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

মোঃ হোসেন আলী( ছোট্ট):

বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ অধ্যুষিত ভারতে মুসলিম স্বার্থরক্ষার আন্দোলনে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন আব্দুল্লাহ-আল-মাহমুদ ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। পরবর্তীতে পাকিস্তান আন্দোলন ও পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় তিনি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদসহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। এছাড়া সমাজসেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখায় স্থানীয় জনগণের মনিকোঠায় স্থান পেয়েছিলেন। কীর্তিমান এই ব্যক্তিত্বের জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলা শহর থেকে মাত্র ৫ কিঃ মিঃ দূরে শিয়ালকোল ইউনিনের কয়েলগাঁতী গ্রামে। তিনি জোতদার কৃষক পরিবারে ১৯০০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম দেরাজউদ্দিন তালুকদার ছিলেন বিদ্যোৎসাহী ও সমাজসেবী। শৈশবে তার শিক্ষাজীবন কাটে সিরাজগঞ্জ শহরে। ১৯১৫ সালে এন্ট্রান্স পাশ করার পর ভর্তি হন রংপুরের কারমাইকেল কলেজে। ১৯১৮ সালে সেখান থেকেই আই এ পাশ করে কোলকাতা চলে যান। কোলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯২০ সালে বি এ ডিগ্রী, ১৯২২ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবীতে এম এ এবং আইন বিষয়ে বি এল ডিগ্রী লাভ করেন। কোলকাতা থাকাকালীন আব্দুল্লাহ-আল-মাহমুদের রাজনীতিতে হাতে খড়ি। সেখানে তিনি মহাত্মাগান্ধী, জওহর লাল নেহরু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, কায়েদে আজম, মুহম্মদ আলী জিন্নাহ, লিয়াকত আলী খাঁন, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ন্যায় প্রখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সহচার্যে আসার সুযোগ পান। পরবর্তীতে তিনি ১৯২৪ সালে নিজ জন্মস্থান সিরাজগঞ্জে এসে আইন ব্যবসা শুরু করেন এবং স্বল্প সময়ের পরিসরেই তিনি সুখ্যাতি লাভ করেন। আইন ব্যবসার পাশাপাশি তিনি একদিকে যেমন সমাজসেবা মূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন তেমনি রাজনীতিতেও সক্রিয় হতে থাকেন।তিনি সিরাজগঞ্জ পৌরসভার   প্রথম ওয়ার্ড চেয়ারম্যান ও পরে সিরাজগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং তৎকালীন পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তারপর  তৎকালীন পাবনা জেলার ১ নং আসনে অভিভক্ত বাংলার বিধান সভার জনাব আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সাহেব ১৯৩৭ সালে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এসেম্বলীর মেম্বার (এম এল এ ) নির্বাচিত হন এবং আইন প্রণেতা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন । তিনি পার্লামেন্টের সেক্রেটারী নিযুক্ত হন । তখনকার সময়ে বৃটিশ ভারতের পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ সদর, কামারখন্দ, কাজীপুর, রায়গঞ্জ, তাড়াশ মিলে ছিল ১ নং আসন । আব্দুল্লাহ-আল-মাহমুদ অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে বৃটিশ প্রদত্ত  ‘খান বাহাদুর’  উপাধি প্রত্যাখান করেন। তিনি লখ্নৌতে মুসলিমলীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বাংলা প্রদেশ থেকে নির্বাচিত একমাত্র সদস্য হিসাবে যোগদান করেন। এ অধিবেশন শেষে ফেরার পথে বিহারের রাজধানী পাটনায় বৃটিশ সেনা তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় ফরিদপুরের সাবেক জমিদার আব্দুল জহির উদ্দিন লাল মিয়া (পাকিন্তানের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহন মিয়ার অগ্রোজ এবং সাবেক খাদ‍্যমন্ত্রী চৌধূরী কামাল ইবনে ইউসুফের চাচা) গ্রেফতার হন। ঐ সময়টা ছিল সারা ভারতের রাজনীতিতে যুদ্ধসন্ধিক্ষণ। গান্ধী নেহরুর কনগ্রেস মুসলমানদের অধিকারকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ায়, বিচক্ষণ নেতা ব্যারিষ্টার মুহম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলিম লীগ দলের মাধ্যমে মুসলমানদের দাবি-দাওয়া এগুতে থাকেন। তৎকালীন বাংলা প্রদেশে, শেরে বাংলা ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ন্যয় বর্ষিয়ান নেতৃবৃন্দ মুসলিম লীগ রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৩৯ সালে বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠে। অক্ষশক্তি হিটলারের জার্মানী, মুসোলিনের ইটালীও প্রাচ্যের জাপান সমরবাদীরা একের পর এক বৃটিশ উপনিবেশগুলো ছিনিয়ে নিতে থাকে। তখন ভারতেও শুরু হয় বৃটিশ খেদাও আন্দোলন। অপরদিকে নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসু জাপান থেকে ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ গড়ে তুলে বৃটিশ এর বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে যান। ঐ সময়ই ভারতীয় মুসলীম লীগ লাহরে এক সম্মেলন আহ্বান করে। ১৯৪০ সালের ২৩শে মার্চ লাহোর অধিবেশনে শেরে বাংলা ভারতে মুসলীম রাষ্ট সমূহ প্রতিষ্টা করার দাবি উত্থাপন করেন। লাহরের সেই ঐতিহাসিক সম্মেলনে সিরাজগঞ্জ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন, আব্দুল্লাহ-আল-মাহমুদ।১৯৪২ সালে আব্দুল্লাহ-আল-মাহমুদ বৃটিশ ভারতের পাবনা জেলার  বর্তমানে সিরাজগঞ্জ শহরে অবস্থিত শামসুদ্দীন স্টেডিয়ামের স্থানে অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ সম্মেলনের আহ্বায়ক নিযুক্ত হন। উক্ত সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কায়েদে আজম, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সহ বর্সিয়ান নেতৃবৃন্দ । এই সম্মেলনের স্থান ও প্রধান অতিথি কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কে সিরাজগঞ্জে আনার পিছনে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন    জনাব আব্দুল্লাহ-আল মাহমুদ। এবছরই অনুষ্ঠিত নাটোর-বালুরঘাট উপনির্বাচনে মুসলিম লীগ থেকে নির্বাচন পরিচালনার জন্য দায়িত্ব তাকেই দেয়া হয়। এ নির্বাচন ছিল পাকিস্তান ইস্যুতে মুসলিম  লীগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪৫ সালে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ প্রথম ভারতীয় নেতা হিসাবে ইমপেরিয়্যাল জুট কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন। তখন জুট কমিটির সদর দপ্তর ছিলো লন্ডনে।১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট পাকিস্তান এবং ১৫ই আগষ্ট ভারত স্বাধীন হয়। পৃথক দুটো রাষ্টের স্বীকৃতি দিয়ে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী ভারতবর্ষ থেকে তাদের উপনিবেশ গুটিয়ে নেয়। কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সদ্য স্বাধীন পাকিস্তানে নতুন গভর্নর জেনারেল, কায়েদে মিল্লাদ লিয়াকত আলী খাঁন প্রধান মন্ত্রী নিযুক্ত হন। স্বাধীন পাকিস্তানে সিরাজগঞ্জে প্রথম পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে আব্দুল্লাহ-আল-মাহমুদ নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালে আব্দুল-আল-মাহমুদ পাকিস্তান কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে জয়েন্ট চিফ হুইপ নিযুক্ত হন এবং এ বছরই তিনি ভারতের কোলকাতায় পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন এবং ১৯৫২ সন পর্যন্ত সাফল্য ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।১৯৬২ ও ১৯৬৫ সালে আরো দু বার তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের পাবনা জেলার ০১ নং আসন থেকে সদস্য নির্বাচিত হন।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০