সংবাদ ডেস্কঃ

বছরখানেক আগেও বিএনপির নেতা–কর্মীরা প্রকাশ্যে আসতে ভয় পেতেন। নানা রকম পুলিশি হয়রানিতে দলটির বেশির ভাগ নেতাই আত্মগোপনে থাকতেন। প্রকাশ্যে মিছিল–সমাবেশ করলেও পুলিশ ঘিরে রাখত। মিছিল থেকে নেতা–কর্মীদের আটক করা হতো। এমন পরিস্থিতি ছিল যে দলীয় কার্যালয়েও নেতা–কর্মীরা আসতে পারতেন না। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্টের পর চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। দলের নেতা–কর্মীরা অনেকটাই চাঙা; সঙ্গে পুরোনো দলীয় কোন্দলও প্রকাশ্যে এসেছে। এ অবস্থায় দলটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এদিকে একসময়ের বিএনপির শরিক দল জামায়াতে ইসলামীও বহু বছর পর প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এক যুগের বেশি সময় দলটি গোপনে তাদের দলীয় কার্যক্রম চালিয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দলটি তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমে তৎপরতা এনেছে। এরই মধ্যে দলটি জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতেই সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচনের মাঠ গোছাতে ব্যস্ত।

আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি–জামায়াতের এমন তৎপরতা থাকলেও অন্য দলগুলোর কার্যক্রম ঢিলেঢালা। জাতীয় নাগরিক পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বাসদ ও সিপিবির নেতাদের এখনো নির্বাচনমুখী কর্মসূচিতে সেভাবে দেখা যায়নি। সম্প্রতি রাজশাহী জেলা ও মহানগরের সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি।

রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলা ও মহানগর মিলে মোট ৬টি আসন। এর মধ্যে সদর উপজেলা একটি, বাগমারা উপজেলা একটি ও অন্য আসনগুলো দুটি করে উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে

বিএনপি জোরেশোরে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। দলটি বিভিন্ন উপজেলায় কর্মী সম্মেলন করেছে। তবে ৫ আগস্টের পর পুরোনো দলীয় কোন্দল বের হয়ে আসতে থাকে। আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকটি পক্ষ সংঘর্ষেও জড়িয়েছে। এতে প্রাণহানিও হয়েছে।

এসবের মধ্যে দলটির সম্ভাব্য নির্বাচনের প্রার্থীরা বিভিন্ন উপলক্ষ ঘিরে আসন ধরে ধরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ভোটারদের কাছে গিয়ে দলের ও নিজের কথা বলছেন। বিশেষ করে গত ঈদের আগে থেকে এই প্রবণতা আরও বেড়েছে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ (চাঁদ) বলেন, বিএনপি আসনভিত্তিক প্রার্থী ঘোষণা না করলেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাঁদের নিজেদের জাহির করছেন। কেউ কেউ শক্তি প্রদর্শন করছেন। কেউ কেউ নিরিবিলি মানুষের কাছে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই আছেন, গত ১৬ বছরে ছিলেন না। তাঁরা বের হয়ে এসে প্রার্থী হওয়ার জন্য মাঠে নেমেছেন। সব মিলিয়ে নির্বাচনমুখী একটা অবস্থা আছে। দলীয় কোন্দলের বিষয়ে তিনি বলেন, বড় দল হিসেবে এটা আছে। তবে বিএনপি সঠিক প্রার্থী ঘোষণা করলে সবাই ধানের শীষের হয়েই কাজ করবেন। তখন এই কোন্দল খুব বেশি কাজ হবে না। তাঁরা আশা করছেন, রাজশাহীর সব আসনই বিএনপি পাবে।

রাজশাহী মহানগরে বিএনপির কোন্দল সবচেয়ে বেশি প্রকাশ্যে এসেছে। গত মে মাসে দলটির কেন্দ্রীয় নেতার (মিজানুর রহমান, শফিকুল হক ও মোসাদ্দেক হোসেন) কর্মীরা আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন। রাজপথে কয়েক দফা বিএনপির এই অংশ আন্দোলন করেছে। সামনে সদর আসনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে দলীয় নেতা–কর্মীরা আশঙ্কা করছেন।

স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মহানগরে দলীয় কোন্দল এখন প্রকাশ্যে। এটি মিটমাট না করা গেলে সামনে নির্বাচনে বিএনপির জন্য আসনটি ফিরে পেতে সমস্যা হতে পারে।

তবে এসব আশঙ্কার মধ্যে মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি থানা–ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা শুরু করেছে। বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে সমানতালে কর্মী সমাবেশ করছে। বিএনপির আরেকটি অংশ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষের কাছে যাচ্ছে।

মহানগরের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি তাদের আছে। সদর আসনে একাধিক প্রার্থী নির্বাচন করতে চান। তাদের সেই যোগ্যতা আছে। তবে তারেক রহমান যাঁকে দেবেন, তাঁকেই সবাই মেনে নেবেন। তখন দলীয় কোন্দলের অবসান হয়ে যাবে।

মাঠে জামায়াত

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে থাকা রাজশাহী জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে। তারা হারানো রাজনৈতিক অবস্থা ফিরে পেতে নানা রকম তৎপরতা চালাচ্ছে। নির্বাচন উপলক্ষে অনেক আগেই দলটি তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ছয়টি আসনের মধ্যে জেলার পাঁচটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও এখনো রাজশাহী সদর–২ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রার্থী ঘোষণা হতে পারে বলে জামায়াতের নেতারা বলছেন।

জেলার আমির মোহাম্মদ আবদুল খালেক বলেন, জামায়াত নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত আছে। ঘোষিত প্রার্থীদের অভিজ্ঞতাও ভালো। রাজশাহীর সব কটি আসনে জামায়াতের সঙ্গে জনগণ থাকবেন, এমনটাই আশা তাঁর।

মহানগরের সেক্রেটারি এমাজ উদ্দিন মন্ডল বলেন, ‘তাঁদের সম্ভাব্য প্রার্থী এখনো কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়নি। আশা করছেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে একজন প্রার্থীকে হয়তো তাঁরা পাবেন। তবে এখন তাঁরা তাঁদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। মানুষের কাছে যাচ্ছেন নানাভাবে।’

এনসিপি ও অন্যান্য দল

সরকার পতনের পর রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের কোনো দলীয় কার্যক্রম চোখে পড়েনি। রাজশাহী আওয়ামী লীগের দুই সংসদ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। অনেক নেতা দেশে ও বিদেশে পালিয়ে আছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় এখন ধ্বংসস্তূপ। আওয়ামী লীগের নির্বাচনসঙ্গী জাতীয় পার্টিরও কোনো কার্যক্রম নেই। দলটির নেতাদের প্রকাশ্যে দেখা যায় না। একইভাবে ওয়ার্কার্স পার্টিরও কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। কার্যক্রমে নেই সিপিবি, বাসদ, খেলাফতে মজলিসসহ অনেক দল। সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির জেলা ও মহানগরের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলটির সমন্বয়কারী নেতারা জানিয়েছেন, ২২ জুন তাঁরা নির্বাচন কমিশনে যান নিবন্ধন ও প্রতীকের জন্য। এটি হয়ে গেলে সামনে তাঁরা নির্বাচনমুখী রাজনীতি করবেন।