
সামিউল হক,শামীম তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামে শুক্রবার রাতের অন্ধকারে প্রায় ১৫০ বিঘা তিন ফসলী জমিতে আবারও পুকুর খনন শুরু করলে একটি ৭০ লাখ টাকা দামের এক্সেভেটর মেশিন ( খনন যন্ত্র ) পুড়িয়ে দিয়েছে।
বিষয়টি তাড়াশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মামলা, ভ্রাম্যমান আদালতে জেল- জরিমানা, বছর বছর কৃষক আন্দোলন উপেক্ষা করে গত দেড় দশকে তাড়াশ সদর ইউনিয়ন এলাকার মাধবপুর, মথুরাপুর, চক গোপীনাথপুর, আগরপুর, বিদিমাগুড়া, শ্রীকৃষ্ণপুর, সাস্তানসহ আশে- পাশের আরো কয়েকটি গ্রামের ফসলী মাঠের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ভাগ তিন ফসলী জমিতে পুকুর খনন করা হয়ে গেছে। তাতেই এলাকার প্রায় ১০ টি গ্রামের কৃষকের প্রায় চার হাজার বিঘা ফসলী জমি জলাবব্ধ কবলে পড়েছে।
সম্প্রতি এ এলাকার কয়েক জন প্রভাবশালী মাধবপুর গ্রামের মৌজায় কৃষক গোলাপ হোসেন, মকুল হোসেন, সোরহাব আলী, আব্দুল মালেকসহ ২০ থেকে ২৫ জন কৃষকের প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে পুকুর খননের জন্য বিঘায় ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে সব কিছু ম্যানেজ করে পুকুর খনন করে দেবার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন।
পাশাপাশি গত শুক্রবার রাতে এক্সেভেটর মেশিন বা খনন যন্ত্র দিয়ে গভীর রাতে পুকুর খনন কাজ শুরু করেন। আর এক্সেভেটর মেশিন বা খনন যন্ত্র দিয়ে গভীর রাতে পুকুর খনন কাজ করার শব্দ পেয়ে মাধবপুর, বিদিমাগুড়া, মথুরাপুরসহ কয়েক গ্রামের প্রায় ৪ শতাধিক বিক্ষুদ্ধ নারী ও পুরুষ একত্রিত হয়ে ওই রাতেই এক্সেভেটর মেশিন বা খনন যন্ত্র ঘিরে রেখে পুকুর কাটার প্রতিবাদ করতে থাকে। এ সময় খনন কাজ বন্ধ করে খনন যন্ত্রের চালক পালিয়ে যান। তখন বিক্ষুদ্ধ কৃষকদের মধ্যে কয়েকজন ওই খনন যন্ত্রে আগুন দেয়। তবে খনন যন্ত্রের আগুন নেভাতে কেউ সাহস করেনি। এতে মেশিনটির ইঞ্জিনের পুরো অংশ পুড়ে যায়। তবে এখন পর্যন্ত এক্সেভেটর মেশিন বা খনন যন্ত্রের মালিকের পরিচয় পাওয়া যায়নি বলে ঘটনাস্থলে থাকা তাড়াশ থানার উপ- পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) রতন কুমার সরকার জানিয়েছেন।
অবশ্য, পুকুর খননকারীদের মধ্যে আব্দুল মালেক নামের একজন জমির মালিক জানান, আমার জমিও জলাবদ্ধতায় আবাদ করতে পারছিনা। তাই পুকুর কেটে কিছু আয় হবে। তাতে সংসার চলবে। এ আশায় পুকুর খনন করছি।
এ দিকে তাড়াশ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আকতার হোসেন জানান, পুকুর খননের ফলে তাড়াশ সদর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কৃষকের হাজার হাজার বিঘা জমি কার্যতঃ পতিত থাকছে। আর প্রায় আট বছর আবাদ করতে না পেরে বেশি সংখ্যক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা রাগে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। যার বহিৃ প্রকাশ হয়েছে শুক্রবার রাতে ভেকু মেশিন পোড়ানো মধ্য দিয়ে।
পুকুর খনন প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুইচিং মং মারমা বলেন, পুকুর খনন বন্ধে উপজেলা জুড়ে মাইকিং করা হচ্ছে। পুকুর খননকারী চক্র রাতে খনন কাজ করছে। তারপরও প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জেল জরিমানা, নিয়মিত মামলা করা অব্যহৃত রেখেছে। আসলে প্রশাসনের সাথে এলাকাবাসীকেও সচেতন হতে হবে। তা না হলে পুকুর খনন বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব।